• শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
আমিরাত সফর শেষ করলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যে যেন হতভম্ব মোদি! অপারেশন ডেভিল হান্ট : যৌথ অভিযানে নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতার ৯ মসজিদে ফাঁস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা জামালগঞ্জে মানব পাচার মামলায় ভীমখালী ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলী হুসেন গ্রেফতার  ইজতেমায় কোনো ডেভিল পেলে ধরিয়ে দিন: জিএমপি কমিশনার কোম্পানীগঞ্জে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্য প্রশিক্ষণ সম্পন্ন মিরপুর মডেল থানার অভিযানে দুই আসামী সহ ৩০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার লালপুরে জোরপূর্বক আশ্রমের জমিদখলের চেষ্টা, ইউএনও সহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা রাজধানীর ফরাজী হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসায় অভিযোগ

লাকী‘র বেদবাক্যে অন্ধ বিশ্বাসীরা সাংবাদিকদের বিতর্কিত করতে বড়ই উৎসাহী

সিনিয়র সাংবাদিক সাঈদুর রহমান রিমন:- / ৫১ Time View
Update : রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪

ছাগল কাণ্ডে ধরাশায়ী, লুটেরা এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর দম্ভোক্তিকে আমরা চোখ বুজে ‘বেদবাক্য‘ বলেই মেনে নিয়েছি। কোনো যুক্তি, কারণ ছাড়া- বিনা প্রশ্নেই বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত মতিউরের স্ত্রী হলেও তিনি কোনভাবেই মিথ্যা বলেন না, বলতে পারেন না। আমরা ধরেই নিয়েছি তার মতো পূত:পবিত্র নারীর দ্বারা প্রতারণা কিংবা বিন্দুমাত্র কুটকৌশল খাটানো কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

“বড় বড় সাংবাদিকদের কিনে এসেছি, সব থেমে যাবে” কথাটি লায়লা লাকী যে মুহূর্তে বলেছেন, ঠিক সেই মুহূর্ত থেকেই তার প্রতি অন্ধ বিশ্বাস জন্মেছে এবং তা কোরআন-হাদিসের মতোই অন্তরে গ্রোথিত করে নিয়েছি। তার কথা প্রশ্নহীন সত্যবচন হিসেবে মনে করেছি বলেই আমরা ‘সুবিধাভোগী বড় সাংবাদিকদের তালিকা’র সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে উঠেছি।

লুটেরা মতিউরের প্রথম স্ত্রী লাকী তাদের পাহাড়সম সম্পদ রক্ষার্থে, নিজেকে ও স্বামীকে বাঁচাতে সবরকম ফন্দিফিকির করবেন- এটাই তো সাভাবিক। দেশে এখন বড় কোনো অঘটনের ভয়াবহতায় যদি মতিউরের সব গল্প চাপা পড়াটা নিশ্চিত হয়- তাহলে সেই অঘটনটি ঘটাতে কোটি কোটি টাকা ঢালতেও একবিন্দু দ্বিধা করবেন না তারা। নিদেনপক্ষে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি, কিংবা সাংবাদিকতাকেই বিতর্কিত করা যায় তাহলে তো কথাই নেই। মুহূর্তেই সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন লাকী-মতিউরের লুটেরা জুটি।

এই হালকা বুদ্ধির সহজ পরিকল্পনা মাথায় নিয়েই তারা সাংবাদিকদের বিভাজন-বিতর্কিত করার অপকৌশলে নামলেন কি না, এমন কিছু আমাদের সন্দেহমূলক ভাবনাতেও কিন্তু আসে না। আমাদের বদ্ধমূল ভাবনায় শুধু আসে লায়লা লাকীর (পরিকল্পিত ভাবে) প্রকাশ করা ‘টাকা দিয়ে সব থামানো‘র বিষয়টি। বড় সাংবাদিকদের বস্তায় বস্তায় টাকা দেয়ার বিষয়টি গুজব হলেও তা আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে চাই। এ জন্য যুক্তি, প্রমাণ, পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন বোধও করছি না, সত্য-মিথ্যা অনুসন্ধান করে দেখার এতটুকু আগ্রহও জাগে না মনে।

বলা হচ্ছে, ‘একজন সাংবাদিকের চাঁদপুরস্থ খামার বাড়ি বেড়ানোর উছিলায় বড় সাংবাদিকদের কিনে ফেলা হয়েছে।‘ এমন উড়ন্ত তথ্য পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে বিশ্বাসও করে নিচ্ছি, সূত্রবিহীন অনুমান নির্ভর সে তথ্যকে পুজি বানিয়ে দেদারছে অপপ্রচারও চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পেশাদারিত্বের সঙ্গেও কী বিষয়টি সঙ্গতিপূর্ণ?

অপেশাদারিত্বের এসব কাজ তো কথিত টিকটকার, ব্লগার, ইউটিউবারদের ভাইরাল ঘৃণ্যতা বলেই মনে করা হয়। এখন কী সে ভাইরাল ভুত সরাসরি পেশাদারদের কাধেও চেপে বসলো? সাংবাদিক হয়েও আমরা তাদেরকেই অনুকরণ, অনুসরণ করছি নাতো?

মতিউরের লুটপাটকৃত সম্পদের সবচেয়ে বেশি অংশের সুবিধাভোগী নারী লায়লা লাকীর সূত্রহীন, প্রমাণহীন নিছক বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই সাংবাদিকদের বিতর্কিত করার কর্মকাণ্ডে আমরা যেন ঝাঁপিয়ে পড়েছি। ফেসবুকে টিকা-টিপ্পনী, রম্য, কার্টুন প্রকাশের ক্ষেত্রে রীতিমত পাল্লাপাল্লি চলছে বৈকি। বাস্তবেই পান থেকে চুন খসলে সাংবাদিকতাকে বিতর্কিত করতে একশ্রেণীর সাংবাদিকই অতি উৎসাহী ভূমিকায় নামেন বরাবর।

এরইমধ্যে বড় সাংবাদিক আর ছোট গণমাধ্যমের প্রসঙ্গ তুলে কেউ কেউ বিরাট আয়তনের বিভাজন সৃষ্টির কথাবার্তাও লিখতে শুরু করেছেন। এরপর হয়তো প্রিন্ট পত্রিকা, অনলাইন ও টিভি চ্যানেলকে আলাদা আলাদা ভাগে বিভক্ত করার বিতর্কও উঠে আসবে। মোট কথা, মতি-লাকীর প্রসঙ্গ গোল্লায় যাক, আগে সাংবাদিকদের সাইজ করি।

একটু ভাবুন তো, এ পর্যন্ত লুটেরা মতিউরকে ঘিরে যতোটা নিউজ কাভারেজ হয়েছে তা কি অপ্রতুল? মোটেও না। কোনো গণমাধ্যম মতিউর গংকে একচুল ছাড় দিয়ে রিপোর্ট করার নজির আমার চোখে পড়েনি। অনলাইন সংযুক্তি আছে এমন টিভি চ্যানেল, পত্রিকা, পোর্টাল ঘেঁটে দেখা যায়, ছাগল কাণ্ড, মতিউর এবং তার পরিবারের সদস্যদের ঘিরে অন্তত ৪৩টি ভিন্ন ধরনের শত শত নিউজ প্রকাশ হয়েছে। যেদিন লাকী সাংবাদিক কিনে ফেলার কথা প্রকাশ করেছেন- সেই নিউজও কিন্তু মিডিয়াগুলোতে কাভারেজ পেয়েছে। এটা কি থামিয়ে দেয়া প্রমাণ করে? ঈদের পূর্ব সময় থেকে শুরু হওয়া ছাগল কাণ্ডের মতিউরের বিষয়াদি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের নজির আজকেও রয়েছে।

বিষয়টি আমার অজ্ঞতা থেকে ভুল ভাল বিশ্লেষণও হয়ে থাকতে পারে- কিন্তু একজন সাংবাদিক হিসেবে আপনিও নিজের বিবেক দিয়ে তা ভেবে দেখুন তো। মিডিয়ার চলমান সংবাদ কাভারেজের পরিবর্তে মতি গংয়ের সাফাই গাওয়ার নজির এখনো চোখে পড়েনি। প্রয়োজনীয় সংবাদ তথ্যও কী এড়িয়ে যাচ্ছেন কেউ? সেসব যদি না ঘটে থাকে তাহলে সাংবাদিকদের বিতর্কিত করার অতিউৎসাহ কার স্বার্থে?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
ভাষা পরিবর্তন করুন »