• রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
অপারেশন ডেভিল হান্ট : নোয়াখালীতে ৬দিনে গ্রেপ্তার ৬৫ ছবি ভাইরাল, দলে ক্ষোভ… কাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ আ.লীগ নেতা রাতারাতি বিএনপি হয়ে গেলেন রাজধানীর লালবাগ এলাকায় দুই বান্ধবীকে গণধর্ষণ মামলার পলাতক  প্রধান আসামী জনি গ্রেফতার  কুমিল্লায় র‍‍্যাবের অভিযানে ৭০ কেজি গাঁজাসহ আটক ০২ পাবনার ভাঙ্গুড়ায় ডিবি পুলিশের অভিযানে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার জাতীয় পর্যায়ে তারুণ্যের উৎসব ২০২৫ ইয়ুথ দাবা টুর্নামেন্টে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের ব্যাপক সাফল্য অর্জন জুলুম নির্যাতন ও অত্যাচর অবসান করতে কোরআনের আইন বাস্তবায়ন করতে হবে: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গত ২-৩ দিনে নগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের ৪০ (চল্লিশ) জন কে আটক করেছে পুলিশ হাসিনা ভেবেছিলেন তাকে নড়াবার কেউ নেই: ফয়জুল করীম খুনিদের ছাড় নেই: সারজিস আলম

রাজিবপুরের একজন মোখলেছুর রহমান, যার কথাই শেষ কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক / / / ২২৮ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

কুড়িগ্রামের রাজিবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং একই সাথে রাজিবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোখলেছুর রহমান। সারাদেশে একযোগে যেসব এমপিওভুক্ত কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রাজিবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজও একটি। রাজিবপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট সরকারি গেজেটভুক্ত হয়। সেকারণে বিধি মোতাবেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানের সকলকেই পুনরায় নিয়োগ ও যোগদান করতে হয়েছে।

সরকারি নিয়োগ বিধি অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। অথবা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ বা যোগদান করতে পারবেন না। যেহেতু মোখলেছুর রহমান উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদে বিদ্যমান ছিলেন, সেহেতু সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগের শর্ত পূরণের জন্য ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশীদ মন্ডলের নিকট হস্তান্তর করে অব্যাহতি গ্রহণ করেন।

দায়িত্ব হস্তান্তর পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, সরকারি কলেজের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ গ্রহণ করে যোগদান করার কারণে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ এবং পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। সেকারণে জেলা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত রাজিবপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মাহবুবুর রশীদ মন্ডল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে বহাল থাকবেন। ওই পত্রে সদয় অবগতির জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির দপ্তর সম্পাদক, জেলা বিএনপির সভাপতি/সম্পাদক এবং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বরাবর অনুলিপি প্রদান করেন বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু দাপ্তরিক প্রয়োজন মোতাবেক পদত্যাগ বা অব্যাহতি পত্র উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস রাজিবপুর, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস কুড়িগ্রাম, আঞ্চলিক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ঢাকায় জমা দেন। কিন্তু কোনো এক দুরভিসন্ধিমূলক কারণে কেন্দ্রীয় বিএনপির দপ্তর, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নিকট অনুলিপি প্রদান করেননি বলে জানা গেছে।

শুধুমাত্র রাজিবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে অনুলিপি দিয়ে তাতে অব্যাহতি গৃহীত হয়েছে মর্মে লিখে নেন এবং ওই ছাড়পত্র দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ ও যোগদান সম্পন্ন করে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। সরকারি চাকরি বিধি মোতাবেক ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সহকারী অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান নন-ক্যাডার (প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা) হিসেবে পিআরএল-এ কর্মরত আছেন।

ইতিমধ্যে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পূর্ববর্তী সরকারের পতন হলে, গত ৫ আগস্ট থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপি ও জেলা বিএনপির কোনো নির্দেশনা ছাড়াই নিজের ইচ্ছায় স্ব-ঘোষিত সভাপতি হিসেবে রাজিবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ দখল করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির কিছু নেতাকর্মী। বিএনপি দলীয় সকল রাজনৈতিক সভা সেমিনারে সভাপতি হিসেবে অংশগ্রহণ করে বক্তৃতা দিচ্ছেন এবং দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এতে করে রাজিবপুর উপজেলা বিএনপি ও সকল অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে শুধু ক্ষোভের উদ্রেকই হচ্ছে না, মাঝে মধ্যে বিশৃঙ্খলা, হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দলীয় পরিচয়ে ইতিমধ্যে প্রভাব বিস্তার শুরু করেছেন মোখলেছুর রহমান। ওই সূত্র জানায়, গরু হাট, বালু মহল ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ফোন করে নিজের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন তিনি। ওই সূত্র আরও জানায়, সম্প্রতি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে ক্রীড়া সংস্থার ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে একজন ক্রীড়া সাংবাদিকও থাকবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই আদেশে। এই পদে নিজের পছন্দের সাংবাদিক বসানোর জন্য কমিটি গঠনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ফোন করে রফিকুল ইসলাম নামের একজনকে উপজেলা ক্রীড়া সাংবাদিক করার কথা বলেন মোখলেছুর রহমান। এমন প্রতিটি বিষয়েই তিনি সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন বলে জানিয়েছেন ওই সূত্রটি। শুধু তাই নয়, সরকারি জায়গা দখল করে ওয়াল নির্মাণেরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার কলেজ পাড়া এলাকার আব্দুল হামিদ নামের এক ব্যক্তির দোকানঘর ভেঙে দিয়ে তার ওই জায়গা দখলে নিয়েছেন মোখলেছুর রহমানের অনুসারীরা।

এ বিষয়ে আব্দুল হামিদ বলেন, ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে আমি দোকান বন্ধ করে বাসায় আসার পর আমার দোকানটি ভেঙে ফেলে। এসময় আমার ছেলে দোকানটি ভাঙতে নিষেধ করলে তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারতে আসলে সে দৌড়ে পালিয়ে আসে। আমার দোকানে ৬৪ বস্তা সার ও বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ছিল। সব মিলিয়ে দোকানে ১০ লাখ টাকার মালামাল ছিলো। সব মালামাল তারা লুট করে নিয়ে যায়।

মোখলেছুর রহমান সরকারি চাকুরিজীবী কিনা? দলীয় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কিনা? তিনি পুনরায় সভাপতি পদে বহাল হয়ে সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন, সেক্ষেত্রে স্ব-পদে বহালের জন্য কোনো পত্র বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে কি? যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে তিনি বহাল হলেন কিভাবে?

এসব প্রশ্নের জবাবে রাজিবপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই বলেন, তিনি (মোখলেছুর রহমান) সরকারি চাকরি করেন। তিনি সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মাহবুবুর রশীদ মন্ডলকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। আর স্ব-পদে বহালের জন্য আমার জানা মতে কোনো পত্র বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। আমার কাছে কোনো পত্র আসেনি। তবে শেষ প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য না করে বলেন, আপনি একটু জেলায় কথা বলুন, এবিষয়ে জেলা সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক ভালো বলতে পারবেন।

জানা গেছে, উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুর রশীদ মন্ডল মোখলেছুর রহমানের আপন বড় ভাইয়ের ছেলে (ভাতিজা)। সে কারণে তার কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া সম্ভব নয়। মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা যায়নি।

মোখলেছুর রহমানের বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা’কে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো জবাব মেলেনি।

সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় কোনো দলীয় রাজনীতি করতে পারেন কিনা বা দলীয় পদে থাকতে পারেন কিনা জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম বলেন, উনার চাকরি শেষ হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে রাজনীতি করতে কোনো সমস্যা নেই। পিআরএল অবস্থায় রাজনীতি করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমি যতটুকু জানি এক্ষেত্রে সমস্যা নেই তবে আমি এবিষয়ে পরিষ্কার না।#


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
ভাষা পরিবর্তন করুন »