এ সময় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের প্রশংসা করে বলেন, ‘দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আপনাদের অকুতোভয় সংগ্রাম, প্রাণ বাজি রেখে লড়াই। আপনাদের সাথিরা প্রাণ দিয়ে হলেও একটি ফ্যাসিবাদী শাসককে পরাস্ত করতে পেরেছে। ফ্যাসিবাদী শাসককে পলায়ন করতে বাধ্য করেছেন। দীর্ঘদিন ১৫ বছর ধরে যে শাসন আমাদের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো বসে ছিল।’
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘তাঁকে (শেখ হাসিনা) আপনারা দৃঢ়তা, সাহসিকতা দিয়ে, নির্ভীক, অবিচল প্রচেষ্টা দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন, যারা প্রাণবাজি রেখে লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী শাসকের বিরুদ্ধে বিজয় হয়েছে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কারণে রাষ্ট্র সংস্কারের বর্তমান কার্যক্রম চলা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আজকে এখানে কথা বলতে পারছি, এক সঙ্গে বসতে পারছি, তা সম্ভব করে তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আজকের নেতৃত্বের আন্দোলনের কারণে। সে কারণে আপনাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ইতিহাসের অংশ হিসেবে জাতি আপনদের মনে রাখবে। আপনারা ইতিহাসের উজ্জ্বল অধ্যায় তৈরি করেছেন।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের দাবি প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, ‘সে বিজয়ের পাশাপাশি আপনারা সুস্পষ্টভাবে বলছেন একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চান এবং আপনাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন ধরে যে আকাঙ্ক্ষা মানুষের মধ্যে ছিল সেটা মূর্ত হয়ে উঠেছে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য। এ অভাবনীয় ও অকুতোভয় গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্র সংস্কারের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য আপনাদের অবদান স্বীকার করব।’
বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা পর্যুদস্ত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি গণতন্ত্রের সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় বিভিন্নভাবে ভূলুণ্ঠিত করা হয়। রাষ্ট্রকে কীভাবে এক ব্যক্তির করতলগত করে একটি শাসন ব্যবস্থা করেছিল।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা তৈরি করেছে জানিয়ে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এখন আমাদের কাজ, সকলে মিলে যেন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি। যেন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের শাসন ফেরত না আসে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্থায়ী রূপ নেয়। যেন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সমস্ত রকম নিপীড়ন মোকাবিলা করতে পারি এবং সে ব্যবস্থাগুলো অপসারণ করতে পারি।’
আলোচনা প্রয়োজনে অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই জাতির আকাঙ্ক্ষার জায়গায় জাতীয় সনদ তৈরি করতে।’
এ সময় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশে যেন আর স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হয়, সে জন্য জুলাই সনদ প্রয়োজন। তিনি বলেন, শুধু একটি দলকে সরিয়ে অন্য দলকে ক্ষমতায় বসানো জুলাইয়ের উদ্দেশ্য ছিল না; বরং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করে রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তই ছিল জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের পরে জনমনে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তা পূরণ করা আমাদের অঙ্গীকার।
বৈঠকে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন। কমিশনের পক্ষে ঐকমত্য ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বে ৫ জন এতে অংশ নেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায়ন, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, সংবিধান সংশোধনের সীমাবদ্ধতা, সংরক্ষিত নারী আসনে ভোট এবং দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারার বিষয়ে আলোচনা হয়।
এনসিপির প্রতিনিধি দলে আছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, আক্তার হোসেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারোয়ার তুষার, নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, জাবেদ রাশেল, নিভা ও সামান্তা শারমিন।